ছাগলের পিপিআর রোগের কারন লক্ষন,প্রতিকার,প্রতিরোধ
পি পি আর কি?
পি,পি,আর হচ্ছে ছাগলের একটি জীবন ঘাতী রোগ।Peste des Petits Ruminants (PPR) নামক ভাইরাসের কারনে এ রোগ হয়।এ রোগ হলে অসুস্থ প্রাণির জ্বর, মুখে ঘাঁ,পাতলা পায়খানা,শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।অনেক সময় অসুস্থ প্রাণিটি মারাও যেতে পারে।বিজ্ঞানীদের ভাষায়, এটি একটী মরবিলি ভাইরাস (Mrovilli virus) যার ফ্যামিলি হল প্যারমিক্সো ভাইরাস (Paramyxo virus)।এ রোগটি বিভিন্ন গবাদি পশু ও কিছু কিছু বন্য প্রাণিতে হতে পারে।তবে এ রোগটি সচরাচর দেখা যায় ছাগল এবং ভেড়াতে।
এ রোগটি প্রথম দেখা
যায়, আইভরী কোষ্টে ১৯৪২ সালে।তারা এ রোগকে কাটা (kata) বলত।১৯৮৭ সালে আরব আমিরাতে চিড়িয়াখানার
প্রাণি আক্রান্ত হয় ।এটি প্রথম ছাগল ভেড়া ছাড়া অন্য প্রাণি আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড।ঐ
চিড়িয়াখানায় গজলা হরিন (gazells), বুনো ছাগল
(ibex),গেমস বক(gemsbok) এর দেহে এ রোগ সনাক্ত করা হয়।২০০৭ সালে চীনে সর্ব প্রথম এ
রোগ রিপোর্ট করা হয়।২০০৮ সালে মরোক্কোতে এ রোগ প্রথম সনাক্ত করা হয়।
কিভাবে এ রোগ ছড়ায়?
১) অসুস্থ প্রাণির
চোখ,নাক,মুখ থেকে নিঃসৃত তরল,পায়খানা ইত্যাদির
মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে।
২) যে সমস্ত প্রাণি অসুস্থ প্রাণির সংস্পর্শে থাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সে রো সুস্থ প্রাণিকে আক্রান্ত করতে পারে।
৩) অসুস্থ প্রাণির হাঁচি-কাসির মাধ্যমেও এ রোগ সুস্থ প্রাণিকে আক্রান্ত করতে পারে।
৪) পানি, খাদ্য পাত্র এবং অসুস্থ প্রানির ব্যবহৃত আসবাব পত্র দিয়েও এ রোগ ছড়াতে পারে।
২) যে সমস্ত প্রাণি অসুস্থ প্রাণির সংস্পর্শে থাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সে রো সুস্থ প্রাণিকে আক্রান্ত করতে পারে।
৩) অসুস্থ প্রাণির হাঁচি-কাসির মাধ্যমেও এ রোগ সুস্থ প্রাণিকে আক্রান্ত করতে পারে।
৪) পানি, খাদ্য পাত্র এবং অসুস্থ প্রানির ব্যবহৃত আসবাব পত্র দিয়েও এ রোগ ছড়াতে পারে।
৫) যে প্রাণির শরীরে
জীবানু আছে কিন্তু এখনো রোগের লক্ষন প্রকাশ পায়নি সেসমস্ত প্রাণির মাধ্যমে রোগ এক জায়গা
থেকে আর এক জায়গায় স্থানান্তর হতে পারে।
৬) তবে আশার কথা
হল দেহের বাইরে এ রোগের জীবানু বেশী ক্ষন টিকে থাকতে পারে না।
এই রোগের লক্ষন কি কি?
১) সাধারন পিপিয়ার
রোগের জীবানু শরীরে প্রবেশের ৩ - ৬ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষন প্রকাশ পায়।
২)শরীরের তাপমাত্র হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যেতে পারে। এ তাপমাত্রা ১০৫° থেকে ১০৭° ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
২)শরীরের তাপমাত্র হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যেতে পারে। এ তাপমাত্রা ১০৫° থেকে ১০৭° ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
চিত্রঃ
ছাগলের পি,পি ,আর রোগের লক্ষন
৩) ছাগলের নাক,মুখ,চোখ দিয়ে প্রথমে পাতলা তরল পদার্থ বের হয়।পরবর্তীতে তা ঘন ও হলুদ বর্ন ধারন করে।ধীরে ধীরে তা আরো শুকিয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে ।ফলে প্রাণিটির শ্বাস কষ্ট হতে পারে।
৪) অসুস্থ পশুটির চোখও এ রোগের আক্রান্ত হতে পারে।সে ক্ষেত্রে,ছাগলের চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে।অনেক সময় ঘন দানাদার পদার্থ নিঃসৃত হয়ে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৫) রোগের এক পর্যায়ে
মুখ ফুলে যেতে পারে।মুখের ভিতরে নরম টিস্যুগুলো আক্রান্ত হতে পারে।দাতের গোড়ার মাংস
পেশীতে ঘাঁ হতে পারে।তাছাড়া দাঁতের মাঝখানে ফাঁকে ফাঁকে,মুখের ভিতরে তালুতে,ঠীঁটে,জীহ্বায়
ক্ষত তৈরী হতে পারে।
৬)অনেক সময় অসুস্থ
প্রাণিটির মধ্যে মারাত্মক রকমের ডাইরিইয়া দেখা দিতে পারে।ডাইরিয়ার ফলে প্রচুর পরিমান
তরল শরীর থেকে বের হয়ে যায়।ফলে প্রাণিটি প্রচন্ড রকমের পানি শুন্যতায় ভোগেন।এই পানি
শূন্যতার কারনেও প্রাণিটি মারা যেতে পারে।
৭)অসুস্থ প্রাণিটির
ওজন হ্রাস পায়।ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থেকে প্রাণিটি।
৮)পিপিআর আক্রান্ত
ছাগলে, অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে শ্বাস কষ্ঠ দেখা দেয়।
৯) অসুস্থ হওয়ার
পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে প্রাণিটি মারা যেতে
পারে।
১০)আক্রাণত ছগলটি
যদি গর্ভবতী হয়,তাহলে গর্ভপাতের সম্ভবনা থাকে।
১১) অল্প বয়স্ক পশুগুলো
এ রোগে অধিক আক্রান্ত হয়।
১২) ভেড়ার চেয়ে ছাগলের
মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
রোগ হয়ে গেলে কিভাবে নিয়ন্ত্রন করবেন?
১) অসুস্থ প্রাণিকে
আলাদা করে চিকিৎসা করাতে হবে।
২) অসুস্থ প্রাণির
নাক,মুখ, চোখ দিয়ে নিসৃত তরল যাতে অন্য প্রাণির শরীরে না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে
হবে।
৩) ছাগলের থাকার ঘর জীবানু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৩) ছাগলের থাকার ঘর জীবানু নাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
এ রোগ কি মানুষের হতে পারে?
আশার কথা হল, এ পর্যন্ত মানুষে এ রোগ হবার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসাঃ
১)পি,পি,আর রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই।তবে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে ২য় পর্যায়ের
ব্যাকটেরিয়ার এবং পরজীবি সংক্রমন রধ করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
২)শ্বাস তন্ত্রের
২য় পর্যায়ের সংক্রমন রোধে অক্সিটেট্রাসাক্লিন ও ক্লোর টেট্রাসাইক্লিন খুব কার্যকর।
৩)গবেষনায় দেখা গেছে, ফুইড থেরাপী এবং জীবানু রোধী ঔষধ যেমনঃ ইনরোফ্লোক্সাসিন, সেফটিফোর নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
৩)গবেষনায় দেখা গেছে, ফুইড থেরাপী এবং জীবানু রোধী ঔষধ যেমনঃ ইনরোফ্লোক্সাসিন, সেফটিফোর নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
৪)৫% বরো-গ্লিসারিন
দিয়ে মুখ ধুয়ে দিলে মুখের ক্ষত অনেক ভাল হয়ে যায়।
৫) তবে চোখের চারপাশে,নাক, মুখ পরিষ্কার কাপড় এবং কটন টিউব দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার করে।
৫) তবে চোখের চারপাশে,নাক, মুখ পরিষ্কার কাপড় এবং কটন টিউব দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার করে।
৬) অসুস্থ ছাগলকে
যত দ্রুত সম্ভব আলাদা করে ফেলতে হবে।
৭) অতি দ্রুত নিকটস্থ
প্রাণি সম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করে চিকিৎসকের।পরামর্শ নিতে হবে।
৮) অসুস্থ প্রাণিটি মারা গেলে অবশ্য ভালভাবে পুতে ফেলতে হবে অথবা ,পরিয়ে ফেলতে হবে।
৮) অসুস্থ প্রাণিটি মারা গেলে অবশ্য ভালভাবে পুতে ফেলতে হবে অথবা ,পরিয়ে ফেলতে হবে।
প্রতিরোধঃ
১) পি,পি,আর রোগের
প্রতিরোধের সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো ছাগল এবং ভেড়াকে নিয়মিত টিকা প্রদান করা।
এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে সরকারীভাবে পি,পি,আর রোগের টিকা সরবরাহ করা হয়।আগ্রহী খামারীরা উক্ত দপ্তর থেকে পি,পি,আর টীকা সংগ্রহ করতে পারেন।
এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে সরকারীভাবে পি,পি,আর রোগের টিকা সরবরাহ করা হয়।আগ্রহী খামারীরা উক্ত দপ্তর থেকে পি,পি,আর টীকা সংগ্রহ করতে পারেন।
2) টীকা প্রদান পদ্ধতিঃ
ক) উৎপাদন কেন্দ্র বা সরবরাহ কেন্দ্র থেকে কুল ভ্যান /ফ্লাক্সে পর্যাপ্ত
বরফ দিয়ে টিকা বহন করতে হবে।
খ) ডিসপোসেবল সিরিঞ্জ দিয়ে টিকা
প্রদান করতে হবে এবং সকল রকম জীবানুমুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
গ) টীকা দেওয়ার পূর্বে ১০০ মিলি ডাইলুয়েন্টের বোতল কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা +৪° থেকে +৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করতে হবে।
গ) টীকা দেওয়ার পূর্বে ১০০ মিলি ডাইলুয়েন্টের বোতল কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা +৪° থেকে +৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) ডাইলুয়েন্ট মিশ্রেত টীকা ১-২ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
ঙ) টীকা প্রয়োগের পাত্রা প্রতি ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১ মিঃলিঃ মাত্রা চামড়ার
নীচে প্রয়োগ করতে হবে।
চ) বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই এ টীকা প্রয়োগ করা যায়।২ মাস বয়সের বাচ্চাকেও এ টীকা দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে
চ) বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই এ টীকা প্রয়োগ করা যায়।২ মাস বয়সের বাচ্চাকেও এ টীকা দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে
ছ)ঝুকিপুর্ন এলাকায় ১ বছর পর পুনরায় (বুষ্টার) টীকা প্রয়োগ করতে হবে।
জ)প্রসবের ১৫ দিন পুর্বে গর্ভবতী ছাগল/ভাড়াকে এ টীকা প্রয়োগ করা যাবে না।
ঝ)পুষ্টিহীন প্রাণিকে এ টীকা প্রয়োগ না করাই উত্তম।
ঞ)টীকা প্রয়োগের ১৫ দিন আগে কৃমিনাশক খাওয়ানো গেলে টীকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি
পায়।
ট)খামারে নতুন ছাগল/ভেড়া আনলে ১০ দিন পর টীকা প্রয়োগ করতে হবে।
ঠ)আক্রান্ত ছাগল/ভেড়াকে এ টীকা প্রয়োগ করেয়া যাবে না।
ড) ব্যবহৃত টীকার বোতল বা অবশিষ্ট টীকা যথাযথ ভাবে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
লেখকঃ
ডাঃ সুচয়ন চৌধুরী
ভেটেরিনারি সার্জন
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর,
রাঙ্গামাটি সদর
References
1.
OIE Terrestrial Animal Health
Code:www.oie.int/en/international-standard-setting/terrestrial-code/access-online/
2.
OIEManual of Diagnostic Tests and Vaccines for
Terrestrial
Animal:www.oie.int/en/international-standard-setting/terrestrial-manual/access-online/
6.
Atlas of Transboundary Animal
Diseases Animales Transfronterizas.P. Fernandez, W. White; Ed.: 2011
7.
http://www.vethelplineindia.co.in/ppr-control-in-goat-a-guide-for-animal-health-service-providers/
8.
Control strategies for peste des
petits ruminants in small ruminants of IndiaRev. sci. tech. Off. int. Epiz.,
2011, 30(3), 879-887
এই সুন্দর লেখাটি জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteআপনাকেও ধন্যবাদ,উতসাহিত করার জন্য
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteআমার ছাগলের পাতলাপায়খানা এখন কি করবো
ReplyDeleteআমার ছাগলের পাতলাপায়খানা এখন কি করবো
ReplyDeletethanks for your text
ReplyDelete