“সন্তান সম্ভবা ছাগীটি দু’একদিন ধরে খুব চিৎকার করছে।আর খুব কষ্ঠ পাচ্ছে।আপনি কিছু একটা করুন।”.....খামারীর এমন অনুরোধ শুনে দ্রুত ছুটে গিয়েছিলাম ছাগীটি দেখতে।পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা মোটামুটি বুঝা গেল ছাগীটির গর্ভস্থ বাচ্চাটি মারা গেছে।বাচ্চার পজিশন পালটে গেছে ।বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় Dystokia. বাচ্চাটি আর কোন ভাবে বের হতে পারছিল না।অগত্যা মৃত্যুই তার জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
ধারনা করছি,গর্ভবতী ছাগীটি কোন ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে।অথবা কেউ আঘাত করেছে।আলাপ করে জানতে পারলা।গর্ভবতী ছাগীর সাথে অন্যান্য ছাগলও রাত্রে এক সাথে রাখা হয়। এখানে পাঠাও রাখা হয়।তাই রাত্রে পাঠার শিং এর ঘুসি খেয়েও গর্ভস্থ বাচ্চাটি আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে।
মালিকের সাতে আলোচনা সাপেক্ষে প্রসব করানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।খুব সাবধানতার সাথে ডলিভারীটি করালাম।যদি বাচ্চাটি সামান্য পরিমান শ্বাস থাকত তাহলেও কিছু একটা করা যেত।কিন্তু ডেলিভারী করানো পর দেখলাম মৃত বাচ্চাটির গায়ে পঁচন ধরেছে।তারে মানে বাচ্চা মারা গেছে অনেক আগেই।দৃশ্যটি খুবই হৃদয় বিদারক।তবে পেশা গত কারনে সেটি সহ্য করতে হয়।
তাই প্রিয় খামারী, আমি চাই না আর কোন খামারীর খামারে এই অবস্থা হোক। যারা ছাগল পালন করেন তারা খেয়াল রাখবেন।বাচ্চা প্রসবের এক মাস আগে থেকে ছাগীটি যেন কোন ভাবেই আঘাত প্রাপ্ত না হয়।সম্ভব হলে অন্যান্য ছাগল থেকে আলাদা রাখাই সর্বোত্তম।
আপনার খামারের গর্ভবতী ছাগীটি সুস্বাস্থ্য ও সুপ্রসব কামনা করছি।।
ডাঃসুচয়ন চৌধুরী
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা(অঃদাঃ)
রাঙ্গামাটি সদর,রাঙ্গামাটি
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ খামারীই চাই ভাল জাতের গাভী দিয়ে ডেইরী খামার শুরু করতে।তার বিভিন্ন জায়গায় ভাল জাতের গাভী খুঁজে বেড়ায়।কারন বেশির ভাব উদ্যোগতাই চাই নিজ খামার থেকে ভালটা লাভ বের করে আনতে।
গরু বাচাইয়ে আগে অবশ্য গরুর কিছু বৈশিষ্ট্য যাচাই করতে হবে।তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কিছু বিষয় নীচে আলোচনা করলাম।
১।ওলানের গঠন হবে কোমল এবং নমনীয় অনেকটা থলের মত গঠন। বড় ওলান মানেই কিন্তু সবসময় ভাল গাভী নয়।অনেক সময় মাঝারি আকারের ওলান হলেও ভাল দুধের গাভী হতে পারে। বিস্তারিত জানতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন
৩। ভাল গাভীর দেহের আকৃতিটা হয় অনেক ত্রিকোনাকার অর্থাৎ সামনের দিকে একটু সরু এবং সামনে থেকে পিছনের দিকে তা ক্রমান্বয়ে প্রশস্ত।
৪। গাভীর বুকের পাঁজর হবে প্রসারিত।
৫।গাভীর চামড়া হবে পাতলা ডিলে-ঢালা।
৬।যে গাভীকে যত কম কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে গর্ভবতী করা যায় সেই গাভীর প্রজনন ক্ষমতা তত ভাল।তাই ভাল প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন (Conception Rate) গাভীকেই খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
৭।গাভী তার জীবন দশায় কতটী বাচ্চা দেয় আর কতটূকু দুধ দেয় সেই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ন।
৮।যেই গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং যেই গরুর রোগ হলে সহজে সুস্থ করে তোলা যায় সে সমস্ত গরু নির্বাচন করতে হবে।
৯।গর্ভবতী অবস্থায় বাচ্চাকে সঠিক ভাবে ধারন করার জন্য জরায়ুর পার্শবর্তী হাড়গুলো গঠন সঠিক হওয়া জরুরী।
১০। দুধ দোহনের সময় গাভী কত দ্রুত দুধ ছাড়ছে তার উপর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
এই কাজটি করার জন্য বাঁটের আকার,আকৃতি এবং ছিদ্র সঠিক হওয়া চাই হওয়া চাই সঠিক।
আজকে এই পর্যন্তই ।এরকম আরো পোষ্ট পেতে চাইলে এই পেইজে like দিয়ে সাথেই থাকুন।
ডাঃসুচয়ন চৌধুরী
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অঃদাঃ)
রাঙামাটি সদর
প্রিয় খামারী ভাই-বোনেরা, যারা ডেইরী খামার করেন তাদের প্রায় সবাই চান খামার থেকে
বেশি লাভ করতে।আর লাভ করতে হলেই তো বেশি দুধ প্রয়োজন।তাই আপনার খামারের গাভীটি
যাতে তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে আপনার আশা পূর্ন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে
হবে।কিন্তু কিভাবে? যদি জেনে থাকেন তাহলে মিলিয়ে নিন আর জানা না থাকলে নিমিষেই
নিচের ১০ট বিষয় খেয়াল করুন।
১।কিভাবে দুধ দোহন করান?
যদি দহনের কোন ত্রুটি থাকে,দোহন কারী পরিবর্তন হয় তাহলে দুধের পরিমানও পরিবর্তন
হবে।আর দুধ দোহনের সময় যদি ইভটিচিং করেন তাহলে তো সে বেকে বসবেই।তার মানে দুধ
দহনের সময় তাকে একটি শান্ত-শিষ্ট পরিবেশ দিতে হবে।
২। সুষম খাবার পর্যাপ্ত দিচ্ছেন তো?
যেই গরু বেশীই দুধ দিবে সেই গরুকে বেশি খাবার দিতে হবে এটাই স্বাভাবিক।জানেন সকলে
মানেন কয়জনে?এবার ভাবুন।
৩।গর্ববতী গাভীর শারীরিক অবস্থা কেমন?
গাভী যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তাকে এমন ভাবে খাবার দিতে হবে যেন সে নিজের শরীর
চালানো,দুধ উৎপাদন এবং গর্ভস্থ বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত খাবার
৪।গাভীর বয়স কেমন হল?
যদি বয়স হিসাব করেন তাহলে সাধারনত ৪-৫ বছর বয়সে দুধের ভরা বর্ষা চলতে থাকে।আর ৮-৯
বছরের পর শুরু হয় গ্রীষ্মের খরা।এবার ভাবুন,আপনার কি করা?
৫। শারীরিক ওজনঃ
গরুর ওজন
যত বেশী হয় স্বাভাবিক ভাবে তার ওলান ও পরিপাকতন্ত্র বড় হয়।তাই দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ও
বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬।গর্ভকালঃ
গর্ভকালের শুরুর দিকে দুধের উৎপাদন তেমন পরিবর্তন না হলেও শেষের দিকেউৎপাদন হ্রাস পায়।
৭।কতদিন পর পর বাচ্চা হয়?
বাচ্চা দেওয়ার ২-৩ মাসের মধ্যের যেন গাভী ডাকে আসে।তাহলে আপনি ১-১.৫ বছরের মধ্যেইনতুন বাচ্চা পাবেন।
৮।সব বাটে কি দুধ সমান আসে?
সাধারনত গাভীর পিছনের অংশের বাট দুটি থেকে মোট দুধের ৬০% আসে এবং সম্মুখ অংশের বাট
থেকে বাকি ৪০% আসে।
৯। কয়বার দুধ দোহন করেন?
সাধারনত সবাই দুই বেলা ।আর দুই বেলা দুধ দোহনের ব্যবধান যদি হয় সমান সমান (অর্থাৎ
১২ ঘন্টা পর পর) তবে আপনি সর্বাধিক দুধ সংগ্রহ করতে পারবেন।
১০।গাভীকে কতটুকু পানি দেন?
দুধের প্রায় ৮৭% পানি।
কিন্তু কতটুকু বিশুদ্ধ পানি আমরা তাকে দিচ্ছি?